বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪১ অপরাহ্ন
কালের খবর প্রতিবেদক : যুক্তি আর সভ্যতার উৎকর্ষের যুগে এই ঝলমলে নগরীর উল্টো পাশেই যেনো নিকষ কালো জমাট বাধা অন্ধকারের রাজত্ব। এমনই এক অন্ধকারের ঘটনা মাস দুয়েক আগে প্রত্যক্ষ করেছে দেশবাসী। সেটি ছিল চট্রগ্রামের ডা. আকাশের আত্মহত্যা।
একাধিক পুরুষের সঙ্গে স্ত্রীর দিনের পর দিন অবৈধ সম্পর্কে মানসিক যন্ত্রণা এতটা প্রকট হয়ে উঠেছিল যে, শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নেন ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশ। এ ঘটনাটি নাড়া দিয়েছে পুরো দেশকে।
হয়তো তেমনই এক ঘটনা ঘটতে পারতো ইমরোজ হোসেন জিহাদের (৩০) সঙ্গেও। কিন্তু না, ইমরোজ তার স্ত্রীকে ‘পাপের পথ থেকে ফেরাতে না পেরে’ আত্মহত্যার মতো মর্মান্তিক পরিণতি বেছে নেননি, স্ত্রীকে আইনগতভাবে ডিভোর্স দেন তিনি। ভেবেছিলেন এতে হয়তো মুক্তি মিলবে। অতীতের দুঃসহ স্মৃতি মুছে একটু একটু করে ইমরোজ যখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরছিলেন, ঠিক তখনই পিছু নিলেন তার সেই ডিভোর্সি স্ত্রী। দীর্ঘ প্রায় ১ বছর পর হঠাৎ ইমরোজের বিরুদ্ধে ঠুকে দিলেন মিথ্যা মামলা, আর সেই মামলায় বর্তমানে জামিনে থাকলেও মানসিক যন্ত্রনায় তিলে তিলে শেষ হচ্ছেন তিনি।
বিবাহ বিচ্ছেদের প্রায় এক বছর পর সম্প্রতি সাবেক স্ত্রী মাহবুবা ইসলাম অনামিকার বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ করেছেন রাজধানীর শান্তিনগরের ব্যবসায়ী ইমরোজ হোসেন জিহাদ।
জানা যায়, ২০১৩ সালের ২৮ জুন রাজধানীর শান্তিনগর পীর সাহেবের গলির বাসিন্দা আলহাজ মো: মোজাম্মেল হোসেনের পুত্র ব্যবসায়ী ইমরোজ হোসেন জিহাদের সঙ্গে ২৫ লক্ষ্য টাকা দেনমোহর (উসুল) এর বিনিময়ে মোহাম্মদপুর থানাধীন লালমাটিয়ার বাসিন্দা মৃত একেএম আমিরুল ইসলামের কন্যা মাহবুবা ইসলাম অনামিকার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়।
ভুক্তভোগী ও তার পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, বিয়ের পর কিছুদিন ভাল চললেও একটা সময় ইমরোজ ও অনামিকার মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না। বিভিন্ন সময় ঝগড়া করে স্বামীর দেয়া জিনিসপত্র নিয়ে বাবার বাড়িতে রেখে আসাসহ প্রায়ই জিহাদকে না জানিয়ে পরকীয়া প্রেমিকদের নিয়ে দেশের বাইরে বেড়াতে যেত অনামিকা। রাতভর নেশা করে পার্টি করত। বৈবাহিক জীবনে জিহাদ সন্তান নিতে চাইলে তাতেও অনিহা ছিল অনামিকার।
একপর্যায়ে ইমরোজ দেশের বাহিরে থাকাবস্থায় ২০১৭ সালের ১৮ নভেম্বর মধ্যেরাতে অনামিকা স্থায়ীভাবে ৭টা লাকেস ভর্তি জিনিষপত্রসহ ব্যবসায়িক কাজে রক্ষিত ঘরে থাকা প্রায় ২০ লক্ষ টাকা নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যায়। এসময় উল্টো তিনি ১০ কোটি টাকা দাবি করেন এবং স্বামীর সংসার করবেনা বলে ইমরোজকে জানিয়ে দেয়। অন্যথায় মিথ্যা নারী নির্যাতন মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন।
এ ব্যাপারে পারিবারিকভাবে বসে আপোষ মীমাংসার আহ্বান জানালেও সায় দেননি অনামিকা। এভাবে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করে উপায়-অন্ত না পেয়ে কাবিনে উল্লেখিত দেন মোহরের ২৫ লক্ষ টাকা পরিশোধ করে মাহবুবা ইসলাম অনামিকাকে ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল আইনগতভাবে তালাক দেন ইমরোজ। তালাকের চারদিন পর অর্থাৎ ১৫ এপ্রিল নোটিশ পেয়ে সালিশি পরিষদ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন অনামিকার স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানায় নোটিশ পাঠানো হয়।
এদিকে অনামিকা তালাকের বিষয়টি জানতে পেরে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ওই বছরের ১৫ জুলাই ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ এবং ইমরোজ যেন আর বিবাহ না করতে পারে মর্মে আদালতে একটি মামলা ঠুকে দেন অনামিকা। পরে জেলা জজ মামলাটি খারিজ করে দেন।
এতেও ক্ষান্ত হননি অনামিকা। পরে ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান ইমরোজ ও তার পরিবারকে আরও মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানোর হুমকি দেন। এ পরিপেক্ষিতে ইমরোজ ০৩ আগস্ট পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি ও স্পেশাল ব্রাঞ্চ বরাবর একটি আবেদন করেন। আবেদনে ভিসায় বিদেশ যাতায়াতের ক্ষেত্রে যাতে তাকে স্বামী হিসেবে পরিচয় না দিতে পারে কিংবা তার কোনরূপ কাজে ইমরোজের দায়বদ্ধতা না থাকে সেটি উল্লেখ করা হয়।
এর ক’দিন যেতে না যেতেই কাবিননামা জাল হয়েছে মর্মে ইমরোজ, তার বাবা-মা, মামা ও গুলশানের কাজীরনামে ‘হয়রানী মূলক’ আরেকটি মামলা করেন অনামিকা। এর পরিপেক্ষিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করে বিষয়টি সত্যতা না পেয়ে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি চুড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন এবং উক্ত রিপোর্ট আমলে নিয়ে অনামিকার দায়ের করা এ মামলাটিও আদালত কর্তৃক খারিজ করে যায়।
এরমধ্যে অতীতের দুঃসহ স্মৃতি মুছে ২০১৮ সালের ৩১ আগস্ট পারিবারিকভাবে গুলশানের বাসিন্দা এক তরুণীর সঙ্গে দ্বিতীয় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ইমরোজ হোসেন জাহিদ। ঘটনার শেষ এখানেই হতে পারত, কিন্তু না!
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, পরিবারের মান সন্মানহানীর ভয় দেখিয়ে ইমরোজের ‘সাবেক স্ত্রী’ অনামিকা তার দাবীকৃত ১০ কোটি টাকা চাঁদা আদায়ে মরিয়া হয়ে উঠে। কিন্তু টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় ইমরোজ ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ডিভোর্সের প্রায় এক বছর পর চলতি বছরের ১৮ মার্চ নারী নির্যাতন দমন আইনে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন অনামিকা।
এই মামলায় ইমরোজ হোসেন জিহাদের বিরুদ্ধে তার সাবেক স্ত্রী অনামিকাকে হত্যার হুমকি, যৌতুক দাবি এবং শারীরিক নির্যাতন ও অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এর পরিপেক্ষিতে ২৩ মার্চ ইমরোজ হোসেন জিহাদকে গ্রেফতার করে গুলশান থানা পুলিশ। পরে আদালতে পূর্বের সব কাগজপত্র পেশ করলে একদিন পর (২৫ মার্চ) ম্যাজিস্ট্রেট ইমরোজকে জামিনের আদেশ প্রদান করেন।
এ প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী ইমরোজ বলেন, আমার সঙ্গে বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই অনামিকা তার বন্ধুদের সঙ্গে প্রায়ই আড্ডায় ও নেশায় মেতে থাকত। এমন কি পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপ ভ্রমন করে। এছাড়া প্রেমিকের সঙ্গে তার অন্তরঙ্গ ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধমে ভাইরালও হয়। এভাবে সে আমার দাম্পত্য জীবনকে চরম দুর্বিষহ করে তোলে। তার উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপনের জন্য তার মা ও আত্মীয় স্বজনকে জানালে উল্টো তারা অনামিকার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন, অবশ্য তার চাচা তাকে সুপথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
তিনি বলেন, আমি আসলে অনামিকার সাথে সংসার করা জন্য সব ধরনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে তবেই তাকে আমি আইনগতভাবে গত বছরের ১১ মার্চ তালাক প্রদান করেছি যা সিটি করপোরেশনের শালিশী আদালতের মাধ্যমে (তিনমাস পর) কার্যকর হয়েছে। এরপর দ্বিতীয় বিয়ে করে স্ত্রীকে নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করছি। কিন্তু অনামিকা একের পর এক মিথ্যে মামলা দিয়ে হয়রানি করে আমাদের মান সম্মান নষ্ট করছে, এছাড়া বিভিন্ন সন্ত্রাসীদের দিয়ে নানা ধরনের হুমকি ধামকি দিয়ে আমাদেরকে প্রচন্ড মানসিক টর্চার করে চলেছে।
ইমরোজ বলেন, আমার বাবা-মাসহ আমার বর্তমান স্ত্রী- যিনি আমার অনাগত সন্তানের মা হতে চলছে সেও আতঙ্কের মধ্যে আছে। আজকে আমরা বাসা থেকে বেরুতে ভয় পাই, ঘরে ঘুমাতেও ভয় পাই। প্রতিটা মুহুর্ত একটা অজানা আতঙ্কে ভুগতে হচ্ছে আমাদের।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, আমি যখন দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছি, তখন একের পর এক মিথ্যে মামলা ও সেই খবরে আমার ছবি দিয়ে গণমাধ্যমে প্রচার করে এভাবে মানসিক যন্ত্রণা দিচ্ছে। এমনকি তার মিথ্যা মামলায় একদিন কারাগারেও থাকতে হয়েছে আমাকে।
এক প্রশ্নের জবাবে ইমরোজ বলেন, ডিভোর্সের সময় অনামিকাকে দেনমোহর বাবদ সব টাকা দিয়েও আরও বেশি দেওয়া হয়েছে। তারপরও সে আরও ১০ কোটি টাকা চাচ্ছে। এক বছর আগে ডিভোর্স হয়ে গেছে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে এখন (গত মাসে) সে মামলা করেছে আমি নাকি যৌতুকের জন্য তাকে শারীরিক নির্যাতন করি। যদি আমি তাকে নির্যাতনই করতাম তাহলে ডিভোর্সের আগেই সে আমার নামে মামলা করতে পারত।
তিনি আরও বলেন, মূলত আমার থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেই একের পর এক মামলা ও হুমকি দিয়ে হয়রানি করছে, আসলে তাদের পরিবারই এরকম। ওরা একটা সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। ওর মেঝো বোন আমেরিকা আছে, ভাবছে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে অনামিকাও আমেরিকা চলে যাবে।
ইমরোজ বলেন, আমি একটা সম্মানিত পরিবারের ছেলে, যেখানে বিয়ে করেছি (দ্বিতীয় বিয়ে) তারাও সম্মানিত। আমার সন্তান হবে সেই অপেক্ষায় আছি, সেই চিন্তায় আছি, ব্যবসা করে টাকা ইনকাম করছি। সেই জায়গায় এমন মিথ্যা মামলায় সামাজিক, পারিবারিক ও অর্থনৈতিকভাবে আমি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি।
“এছাড়া একেরপর এক মিথ্যা মামলায় আমার শ্বশুরবাড়ির (দ্বিতীয় স্ত্রীর) মানুষজনের কাছেও ছোট হয়ে যাচ্ছি। আমার ব্যবসায়িক পার্টনার বা বায়াররা কি চিন্তা করছে আমাকে নিয়ে? তারা কি আমার সঙ্গে ব্যবসা করবে?” প্রশ্ন রাখেন ইমরোজ।
তিনি বলেন, সব মিলিয়ে আমাদের গোটা পরিবার আতঙ্কে দিন পার করছে। তার দায়ের করা আগের দুটি মামলা আদালত খারিজ করার পরও এখন আবার নতুন করে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। আমি আর মানসিক যন্ত্রনা নিতে পারছি না, এগুলো প্রতিনিয়ত কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে আমায়। আমি ও আমার পরিবার ওই নারীর হাত থেকে বাঁচতে চাই, সুখে শান্তিতে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে চাই।
এ প্রসঙ্গে বক্তব্য নিতে চাইলে অনামিকার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।